• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

ভূঞাপুরে ঐতিহাসিক জাহাজ ধ্বংস দিবস পালন

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১২ আগস্ট ২০২৩

আব্দুল লতিফ তালুকদার, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের ভূ্ঞাপুরে ঐতিহাসিক জাহাজ ধ্বংস দিবস পালন করা হয়েছে। শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল ১১টায় ভূঞাপুর মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদের উদ্যোগে ভূঞাপুর স্বাধীনতা কমপ্লেক্স হলরুমে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ভূঞাপুর মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম মুকুলের সভাপতিত্বে মো. জাহিদ শামসে্র সঞ্চালনায় স্মৃতিচারণ করেন— কাদেরিয়া বাহিনীর বেতার বিভাগের প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজ বাঙ্গাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা খোদাবক্স মিঞা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ (বীর বিক্রম), বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ গামা (গেরিলা), বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাছেদ করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী তালুকদার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মামুন তরফদারসহ অন্যান্যরা।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৭১ সালে ১১ আগস্ট ঐতিহাসিক জাহাজ ধ্বংসের দিন। এটি টাঙ্গাইল বাসীর নিকট ঐতিহাসিক জাহাজমারা দিবস নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের এই দিনটি মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপুল পরিমান গোলাবারুদ, জ্বালানী ও রসদ বোঝাই ৭টি যুদ্ধ জাহাজ নারায়ণগঞ্জ থেকে ভূঞাপুরে যমুনা নদী হয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিল। জাহাজগুলো টাঙ্গাইলের যমুনার শাখা ধলেশ্বরী নদীর ভূঞাপুরের সিরাজকান্দি নামক স্থানে যাত্রাবিরতি জন্য নোঙর করে জাহাজের সারেং। বিষয়টি কাদেরিয়া বাহিনীর চৌকশ কমান্ডার হাবিবুর রহমান বীরবিক্রমের নজরে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা এলাকার লোকজন নিয়ে ১০ আগস্ট জাহাজ দুটিতে আক্রমণ চালায়। তারা জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্র বোঝাই জাহাজ এস.ইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি—৩, ও এস.টি রাজনের দখল নেন। এসময় অন্য জাহাজগুলো সিরাজগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়। দখলকৃত জাহাজদুটিতে রাখা ১ লক্ষ ২০ হাজার বাক্সে তৎকালিন ২১ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধারা আনলোড করে নিজেদের করে নেয়। আনলোড করে পরের দিন ১১ আগস্ট জাহাজ দুটিতে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করা হয়। এঘটনায় ১১আগস্ট হতে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত পাক বাহিনীর সাথে কাদেরিয়া বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। এতে ৩ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয় এবং আহত হয় অন্তত ২০ জন। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসের ইতিহাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীদের হাতে এত বড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের নজির নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই যুদ্ধকে পট পরিবর্তনকারী অধ্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়।
পরবর্তীতে সিরাজকান্দী জাহাজমারা যুদ্ধে খোয়ানো অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পাক বাহিনী চারদিক থেকে সিরাজকান্দী মাটিকাটাসহ ভূঞাপুরে জল, স্থল ও আকাশ পথে অভিযান পরিচালনা করে। মুক্তিবাহিনী লুট করা সেই অস্ত্র দিয়েই সাহসিকতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করেন। জাহাজমারা যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ ও খোয়া যাওয়া অস্ত্র গোলা বারুদের ঘটনা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, হারানো অস্ত্রসম্ভার উদ্ধার ও মুক্তিযোদ্ধাদের উৎখাতের জন্য আগত পাক বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পূর্বাঞ্চলের প্রধান লে.এ.কে নিয়াজি। তিনি ভূঞাপুর ডাকবাংলোতে অবস্থান করে অভিযান পরিচালনা করছিলেন। এই ব্যাপক তৎরপরতা সত্ত্বেও হানাদার বাহিনী তাদের খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। হানাদার বাহিনীর ৪৭ ব্রিগেড এই অঞ্চল দখলের চেষ্টা করে। বিমান বাহিনীর দুটি স্যাবর জেট বোমা হামলা চালায়। কিন্তু কাদেরিয়া বাহিনীর লুট করা অস্ত্র দিয়েই হানাদার বাহিনীকে সফলভাবে প্রতিহত করে মুক্তিযোদ্ধারা। যুদ্ধকালীন গোলাবারুদ, ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজের গোলা বারুদের আঘাতে এবং পাক বাহিনীর পাল্টা হামলা ও বিমান আক্রমণে এলাকার ঘরবাড়ী ও প্রচুর সম্পদের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বের কাছে পাকিস্তনি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের অসীম সাহসীকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে “বীরবিক্রম” উপাধিতে ভূষিত করেন।
সেই জাহাজ ধ্বংসের ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে উপজেলার সিরাজকান্দি নামক স্থানে প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। দিবসটি পালনের জন্য সরকারিভাবে কোন কর্মসূচি নেয়া হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদ, ভূঞাপুর ১২ আগস্ট শনিবার স্থানীয় স্বাধীনতা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads